1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এখন মাজার

  • Update Time : শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ১৪৯ Time View

প্রত্যয় নিউজডেস্ক: মোঘল শাসনামলে চুন-সুরকি দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের বাড়িউরা এলাকায় একটি পুল নির্মাণ করেছিলেন দেওয়ান শাহবাজ আলী। হাতি নিয়ে পারাপারের জন্য খালের উপর নির্মিত ওই পুলে যাত্রাপথে হাতি নিয়ে বিশ্রাম নিতেন সরাইল পরগণার জমিদার দেওয়ান শাহবাজ আলী। সেই থেকে পুলটির নাম হয় হাতিরপুল। ঐতিহাসিক পুলটিকে দেশের অমূল্য সম্পদ ও পুরাকীর্তির অনন্য নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণ করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর। তবে প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও অবহেলায় পড়ে থাকা নিদর্শনটিতে ভর করেছে কুসংস্কার! স্থানীয়দের অনেকেই পুলটিকে ‘পাক্কি মামার মাজার’ মনে করে উপাসনা করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের তথ্যবাতায়ন থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ১৬৫০ খ্রিস্টাব্দে দেওয়ান শাহবাজ আলী বাড়িউরা এলাকায় পুলটি নির্মাণ করেন। কথিত আছে, দেওয়ানরা হাতির পিঠে করে চলাচল করতেন এবং পুলটির গোড়ায় হাতি নিয়ে বিশ্রাম করতেন। সেজন্য এটিকে হাতিরপুল বলা হয়। বাড়িউরা বাজার সংলগ্ন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গা ঘেঁষেই এই পুলের অবস্থান।

১৯৮৪ সালে পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষিত প্রাচীন হাতিরপুলটি একাধিকবার সংস্কার করে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতর। পুলটি ছিল ওই এলাকার প্রথম পাকা স্থাপনা। সেজন্য এটিকে পাক্কা বা পাক্কি নামেও ডাকা হয়। স্থানীয়দের মতে, একসময় এ পুলে আল্লাহর ওলির আস্তানা ছিল। কোনো কিছু মানত করে পুলে এসে উপাসনা করলেই সেটি পাওয়া যায় বলে ধারণা স্থানীয়দের।

কোনো দম্পতির ঘরে সন্তান না হলে মানত করে এখানে এলে সন্তান হয় বলেও বিশ্বাস করেন অনেকে। আর সেই বিশ্বাস থেকেই প্রত্যেক বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলটিতে মোমবাতি জ্বালিয়ে আসর জমান মাজার ভক্তরা। ভক্তদের মধ্যে নারীরাই বেশি। স্থানীয়রা ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন এসে উপাসনা করেন এই পুলে। ভোগ হিসেবে পুলে রেখে যান মিষ্টি, জিলাপি, দুধ ও কলা।

শংকর দাস নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের এক বাসিন্দা জানান, কয়েক বছর আগে একরাতে তিনি স্বপ্নে পাক্কি মামার মাজারের (হাতিরপুল) কথা জানতে পারেন। এরপর নিজের এক সমস্যার জন্য মানত করে সেখানে গিয়ে মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালান। ফলশ্রুতিতে তিনি তার সেই বিপদ থেকে মুক্ত হয়েছিলেন বলে দাবি করেন।

আবেদুর রহমান নামে বাড়িউরা এলাকার এক বাসিন্দা জানান, তিনিও বিশ্বাস করেন এটি মাজার। কিন্তু এটি কোন ওলির মাজার সেটি জানা নেই তার। মনের বিশ্বাস থেকেই মানুষ এখানে আসেন এবং অনেকেই উপকার পেয়েছেন। উপকার পেয়ে অনেকে আবার মিষ্টিও বিতরণ করেন। সবকিছুই মানুষের বিশ্বাস।

তবে মানুষজনের এই বিশ্বাসকে কুসংস্কার বলে সরাইল উপজেলা প্রশাসন ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর একাধিকবার হাতিরপুলে জমানো আসর ভেঙে দেয়। আর একবিংশ শতাব্দিতে পুরাকীর্তিকে মাজার মনে করার বিষয়টিকে মানুষের ভ্রান্ত ধারণা বলে মনে করছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘একটি পুল কীভাবে মাজার হয়? এটি মানুষের অন্ধ বিশ্বাস ও ভ্রান্ত ধারণা। মানুষের অন্ধ বিশ্বাসকে পুঁজি করে এক শ্রেণির মানুষ এটিকে ব্যবসা হিসেবে নিয়েছে। আর কিছু মানুষ না বুঝেই সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন।’

সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সালেহ্ মোহাম্মদ মূসা বলেন, ‘যতটুকু শুনেছি হাতি পারাপারের জন্যই পুলটি করা হয়েছিল। এখানে মাজারের কোনো অস্তিত্ব আমরা খুঁজে পাইনি। এটি মানুষের অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কার। আর পুলে মোমবাতি ধরিয়ে আসর জমালে পুলিশ গিয়ে সেটি ভেঙে দেয়। এটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে হওয়ায় সীমানা প্রাচীর দেয়ারও কোনো উপায় নেই।’

প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর কুমিল্লার আঞ্চলিক পরিচালক ড. মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘আমি নিজে দুইবার পুলে জমানো আসর ভেঙে দিয়ে এসেছি। এর জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন। হাতিরপুলসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাঁচটি পুরাকীর্তি নিয়ে আমাদের একটি উন্নয়নমূলক কাজের পরিকল্পনা রয়েছে। মাজারের কার্যক্রম সেখান থেকে স্থায়ীভাবে সরিয়ে দিয়ে পুলটিকে আরও দর্শনীয় করে তোলা হবে।’

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..